﴾১﴿ ১১ এবং ১২ জুলহিজ্জায় তিনটি শয়তানকেই কংকর নিক্ষেপ করতে হবে। উহার ধারাবাহিকতা হল নিম্নরূপ:-
প্রথমে জামরাতুল উলায় (অর্থাৎ ছোট শয়তান), অতঃপর জামরাতুল উসতায় (অর্থাৎ মধ্যম শয়তান) এবং সর্বশেষে জামরাতুল আকাবার (অর্থাৎ বড় শয়তান)।
﴾২﴿ দ্বি প্রহরের পর জামরাতুল উলা (অর্থাৎ ছোট শয়তান) এর নিকট আসবেন এবং ক্বিবলার দিকে মুখ করে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করবেন। (কংকর ধরার এবং নিক্ষেপ করার নিয়ম এই কিতাবে বর্ণিত আছে) কংকর সমূহ নিক্ষেপ করে জামরা হতে একটু আগে অগ্রসর হোন এবং বাম হাতের দিকে ফিরে ক্বিবলামূখী হয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত কাঁধ পর্যন্ত এমনভাবে উঠান যেন হাতের তালু সমূহ আসমানের দিকে নয় বরং ক্বিবলার দিকে থাকে১৬। এখন দোআ ও ইস্তিগফারের মধ্যে কমপক্ষে ২০টি আয়াত তিলাওয়াত করার সমপরিমাণ সময় মশগুল থাকুন।
﴾৩﴿ এখন জামরাতুল উসতা (অর্থাৎ মধ্যম শয়তানের) ক্ষেত্রেও এরকম করুন।
﴾৪﴿ অতঃপর সর্বশেষে জামরাতুল আকাবা (অর্থাৎ বড় শয়তান) এর উপরও এ রকম রমী করুন, যেভাবে আপনি দশ তারিখে রমী করেছেন। স্মরণ রাখবেন যে, বড় শয়তানকে রমী করার পর আপনি সেখানে অবস্থান করবেন না। তৎক্ষণাৎ ফিরে আসবেন এবং ঐ সময়টুকুতে দোআ করে নিবেন। (বিশুদ্ধ নিয়ম এটাই কিন্তু বর্তমানে দ্রুত ফিরে আসা অসম্ভব ব্যাপার। তাই কংকর মেরে কিছুটা পথ সামনে গিয়ে ইউটার্ন দিয়ে আসার ব্যবস্থা করে নিন।)
﴾৫﴿ ১২ তারিখেও এরকম তিনটি জামরাতে রমী করবেন।
﴾৬﴿ এগার এবং বার তারিখের রমীর সময় সূর্য ঢলে পড়ার পর (অর্থাৎ যোহরের ওয়াক্তের শুরু) থেকে শুরু হয়। সুতরাং ১১ ও ১২ তারিখের রমী দ্বি প্রহরের পূর্বে কোনো ভাবেই শুদ্ধ হবে না। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৪৮ পৃষ্ঠা)
﴾৭﴿ ১০, ১১ ও ১২ তারিখের রাত (অধিকাংশ অর্থাৎ প্রতিটি রাতের অর্ধেকের চেয়ে বেশী অংশ) মীনা শরীফে অতিবাহিত করা সুন্নাত।
﴾৮﴿ ১২ তারিখে রমী করার পর আপনার ইখতিয়ার (অনুমতি) রয়েছে যে, সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে মক্কা মুকাররমার দিকে রওয়ানা হয়ে যেতে পারবেন। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর চলে যাওয়া আপনার জন্য দোষণীয়। এখন আপনাকে মীনার মধ্যেই অবস্থান করে ১৩ তারিখ দ্বিপ্রহর ঢলে পড়ার পরে নিয়মানুযায়ী তিনটি শয়তানকেই কংকর নিক্ষেপ করে মক্কা মুকাররমায় যেতে হবে ইহাই উত্তম।
﴾৯﴿ যদি মীনা শরীফের সীমানার মধ্যেই ১৩ তারিখের সুবহে সাদিক হয়ে যায়, তাহলে রমী করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। যদি রমী করা ব্যতীত চলে যান, তাহলে দম ওয়াজিব হয়ে যাবে।
﴾১০﴿ ১১ এবং ১২ তারিখের রমী করার সময় হল সূর্য ঢলে পড়া (অর্থাৎ যোহরের ওয়াক্ত আরম্ভ হওয়া) থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত। তবে কোন অপারগতা ব্যতীত সূর্য ডুবে যাওয়ার পরে রমী করা মাকরূহ।
﴾১১﴿ ১৩ তারিখের রমী করার সময় হল, সুবহে সাদিক হতে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। কিন্তু সুবহে সাদিক হতে যোহরের সময় শুরু হওয়া পর্যন্ত সময়ে রমী করা মাকরূহে (তানযীহি)। যোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পরে রমী করা সুন্নাত।
﴾১২﴿ যদি কোন দিনের রমী থেকে যায় বা আদায় করা না হয়, তাহলে তা দ্বিতীয় দিন কাযা আদায় করবে এবং দমও দিতে হবে। কাযা আদায় করার সর্বশেষ সময় হল ১৩ তারিখের সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত।
﴾১৩﴿ এক দিনের রমী অনাদায়ী থেকে গেল, আর আপনি ১৩ তারিখের সূর্যাস্তের আগে আগেই কাযা করে নিলেন তারপরও এবং যদি কাযা আদায় না করেন তাহলেও, অথবা যদি একদিনের বেশী দিন সমূহের রমী অবশিষ্ট রয়ে যায় বরং যদি মোটেও রমী না করে থাকেন, তাহলে প্রত্যেক অবস্থায় শুধুমাত্র একটি দম ওয়াজিব হবে।
﴾১৪﴿ অতিরিক্ত বেঁচে যাওয়া কংকর সমূহ যদি কারো প্রয়োজন হয় তাহলে তাকে দিয়ে দিন। অথবা কোন পবিত্র স্থানে ফেলে দিন। এগুলো জামরাতের উপর নিক্ষেপ করা মাকরূহ (তানযীহি)।
﴾১৫﴿ আপনি কংকর নিক্ষেপ করেছেন, আর উহা কারো মাথা ইত্যাদিতে আঘাত করে জামরাতে লেগেছে। অথবা তিন হাতের দূরত্বে গিয়ে পড়েছে তাহলে জায়েয হয়ে যাবে।
﴾১৬﴿ হ্যাঁ! যদি আপনার কংকর কারো উপর গিয়ে পড়ে, আর সে হাত ইত্যাদি নাড়া বা ঝাড়া দিল, আর এ কারণে যদি ঐ স্থান পর্যন্ত পৌঁছে যায়, তাহলে উহার পরিবর্তে দ্বিতীয় আরেকটি মারবেন।
﴾১৭﴿ উপরের স্থান হতে রমী করেছেন আর কংকর জামরায় চারপাশে তৈরীকৃত পেয়ালার মত প্রাচীর (অর্থাৎ সীমানার দেওয়াল) এর মধ্যে পড়েছে, তাহলে জায়েয হবে। কারণ প্রাচীর হতে গড়িয়ে হয়ত তা জামরাতে লাগবে অথবা তিন হাতের দূরত্বের অভ্যন্তরে গিয়ে পড়বে।
﴾১৮﴿ যদি সন্দেহ হয় যে, কংকর যথাস্থানে পৌঁছেছে নাকি পৌঁছেনি, তাহলে আবার নিক্ষেপ করুন। (বাহারে শরীয়াত, ১ম খন্ড, ১১৪৬, ১১৪৮ পৃষ্ঠা)
রমীয়ে জামরা করার পর দোআ করার ক্ষেত্রে হাতের তালুদ্বয়কে ক্বিবলার দিকে করে রাখুন। হাজরে আসওয়াদ এর সামনে দাঁড়ানোর সময়ও হাতের তালুদ্বয়কে হাজরে আসওয়াদের দিকে করে রাখবেন, আর অবশিষ্ট সর্বক্ষেত্রে আসমানের দিকে করে রাখবেন।
0 Comments