সূরা মূলক এর ৯ টি ফযীলত

১) হযরত সায়্যিদুনা আবু হুরাইরা رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ থেকে বর্ণিত, নবী করীম, রউফুর রহীম ﷺ ইরশাদ করেছেন: “ নিশ্চয় কুরআনে ৩০ টি আয়াত সম্বলিত একটি সূরা আছে, যেটা আপন পাঠকের জন্য সুপারিশ করতে থাকবে, এমনকি তাকে (শেষ পর্যন্ত) ক্ষমা করে দেওয়া হবে আর এটা হলাে تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ. (অর্থাৎ সূরা মূলক)। ” [সুনানে তিরমিযী: ৪/৪০৮ পৃষ্ঠা, হাদীসঃ ২৯০০]

২) হযরত সায়্যিদুনা আনাস رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ থেকে বর্ণিত; রহমতে আলম, নূরে মুজাস্সাম, রাসূলে আকরাম ﷺ ইরশাদ করেছেন: “ কুরআনুল করিমে একটি সূরা আছে, যেটা আপন পাঠকারীর ব্যাপারে ঝগড়া করবে, শেষ পর্যন্ত তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিবে। আর সেটি হলাে সূরা মূলক। ” [আদ দুররুল মনছুর: ৮/২৩৩ পৃষ্ঠা]

৩) হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ  رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ বলেন: “ যখন বান্দা কবরে যাবে তখন তার পায়ের দিক থেকে আযাব আসবে, তখন তার পা বলবে: “ তোমার জন্য আমার (এ) দিক দিয়ে কোন রাস্তা নেই, কেননা এ (ব্যক্তি) রাতে সূরা মূলক পাঠ করতাে। ”  অতঃপর আযাব যখন বুক বা পেটের দিক দিয়ে আসবে, তখন সে (বুক বা পেট) বলবে: “ তোমার জন্য আমার (এ) দিক দিয়ে কোন রাস্তা নেই, কেননা এ (ব্যক্তি) রাতে সূরা মূলক পাঠ করতাে। ”  অতঃপর তা (আযাব) তার মাথার দিক থেকে আসবে, তখন মাথা বলবে: “ তোমার জন্য আমার (এ) দিক দিয়ে কোন রাস্তা নেই, কেননা এ (ব্যক্তি) রাতে সূরা মূলক পাঠ করতাে। “ অতএব এই সূরা হলাে, বাধা প্রদানকারী, কবরের আযাব থেকে রক্ষা করেী, তাওরাতে এর নাম হলাে সূরা মূলক।  যে (ব্যক্তি) রাতে এটা পাঠ করে নেয়, (বস্তুত সে) অনেক বেশি এবং উত্তম কাজ করে থাকে। ” [মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন, ৩/৩২২ পৃষ্ঠা, হাদিস- ৩৮৯২]

৪) হযরত সায়্যিদুনা ইবনে আব্বাস  رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ বলেন: একজন সাহাবী  رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ একটি কবরের উপর নিজ তাবু গাড়লেন। কিন্তু তিনি জানতেন না যে, এখানে কবর আছে। পরে জানতে পারলেন যে, সেখানে কোন এক ব্যক্তির কবর আছে, যিনি সূরা মূলক পড়ছেন। আর সে সম্পূর্ণ সূরা সমাপ্ত করলেন। সেই সাহাবী  رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ রহমতে আলম, নূরে মুজাসসাম, রাসূলে আকরাম ﷺ এর দরবারে উপস্থিত হয়ে আর করলেনঃ “ ইয়া রাসূলাল্লাহু ﷺ! আমি একটি কবরের উপর তাবু ফেলি কিন্তু আমি জানতামনা যে, সেখানে কবর রয়েছে, অথচ সেখানে এমন এক ব্যক্তির কবর ছিলাে, যে প্রতিদিন সূরা মূলক সম্পূর্ণ তিলাওয়াত করে। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করলেন: “ এটা (সুরা মুলক) বাধা প্রদানকারী, এটা মুক্তি দাতা, যেটা তাকে কবরের আযাব থেকে নিরাপদ রেখেছে। ” [সুনানে তিরমিযী: ৪/৪০৭ পৃষ্ঠা, হাদীসঃ ২৮৯৯]

৫) প্রিয় নবী, রাসূলে আরবী ﷺ ইরশাদ করেছেন “ আমার আকাক্ষা হলাে; تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ সকল মু'মিনের অন্তরে (মুখস্থ) থাকুক। ” [কানযুল উম্মাল: ১/২৯১ পৃষ্ঠা, হাদিস- ২৬৪৫]

৬) চাঁদ দেখার পর তা পাঠ করা হলে, তবে মাসের ৩০ দিন পর্যন্ত সে কঠিন অবস্থা থেকে নিরাপদে থাকবে ইনশাআল্লাহ। এজন্য যে, এতে ৩০ টি আয়াত রয়েছে, আর তা ৩০ দিনের জন্য যথেষ্ট। [তাফসীরে রুহুল মাআনী: সূরা মুলক, ১৫/০৪ পৃষ্টা]

৭) হযরত সায়্যিদুনা ইবনে আব্বাস  رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ বলেন:, নবী করীম, রউফুর রহীম, রাসূলে আমীন ﷺ ইরশাদ করেছেন: “ নিশ্চয় আমি কুরআন শরীফে ৩০ আয়াতের একটি সূরা পাই, যে ব্যক্তি শয়নকালে (সূরাটির) তিলাওয়াত করবে, তার জন্য ৩০ টি নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে, তার ৩০ টি গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, তার ৩০ টি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। আল্লাহ তাআলা আপন ফিরিশতাদের মধ্য থেকে একজন ফিরিশতা তার নিকট প্রেরণ করবেন, সে যেন তার উপর নিজ পাখা মেলে ধরে। আর জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত তাকে সকল কিছু থেকে রক্ষা করে আর এটা (সূরা মূলক) হলাে ঝগড়াকারী, আপন পাঠকারীর ক্ষমার জন্য কবরে ঝগড়া করবে, আর সেটা হলাে تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُi
[দুররুল মনছুর: ৮/২৩৩ পৃষ্ঠা]

৮) সুলতানে মদীনা, সরদারে মক্কা, হুযুর পুরনূর ﷺ রাতে আরাম করার (ঘুমানোর) পূর্বে সূরা মূলক, ও (সুরা) আস সাজদাহ, তিলাওয়াত করতেন। [সহীহ মিশকাত: হা/২১৫৫]
[তিরমিযী: হাদিস- ৩৪০৪]

৯) হযরত সায়্যিদুনা ইবনে আব্বাস رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ এক ব্যাক্তিকে বললেন: ‘আমি কি তোমাকে একটি হাদিস উপহার হিসেবে দিব না, যা পেয়ে তুমি খুশি হয়ে যাবে? তখন সে আরয করলো: “ অবশ্যই দিন। ” তখন তিনি رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ বললেন: ‘এই সূরাটি পড়ো تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ (অর্থাৎ: সূরা মূলক) আর এই সূরাটি নিজ পরিবার পরিজন, নিজের সকল সন্তান সন্ততি ও নিজ প্রতিবেশীদের শিখাও। কেননা এটা মুক্তিদানকারী এবং কিয়ামতের দিন আপন পাঠকের জন্য আল্লাহ তায়ালার সাথে ঝগড়াকারী এবং তা তার পাঠকারীকে তালাশ করবে, যাতে তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিতে পারে। আর এই কারণে তার পাঠক আযাব থেকে রক্ষা পাবে।’ [দুররুল মনছুর: ৮ম খন্ড, ২৩১ পৃষ্ঠা]


___________________________
মাদানী পাঞ্জেসূরা বইয়ের ৭৬-৭৯ নং পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। বইটির Pdf ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। আরো ইসলামিক বই পেতে এখানে যান