[১] আল্লাহ তাআলা ও রাসুল صَلَّى اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর সন্তুষ্টির প্রত্যাশী প্রিয় হাজী সাহেবগণ! আপনার হজ্বের সফর ও মদীনা শরীফের জিয়ারত খুব বেশী মোবারক হোক। সফরের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রওয়ানা হওয়ার ৩/৪ দিন আগে থেকে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করে নিন। আর কোন অভিজ্ঞ হাজী সাহেবের সাথেও পরামর্শ করে নিন।
[২] নিজ দেশ হতে ফল কিংবা রান্নার ডেক্সী, মিষ্টি জাতীয় ইত্যাদি খাদ্য বস্তু নিয়ে যাওয়াতে হাজীদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
[৩] মক্কায়ে মোকাররমায় زَادَہَا للہُ شَرَفًا وَّ تَعۡظِیۡمًا আপনার আবাসিক বিশ্রামাগার থেকে মসজিদে হারামে পায়ে হেঁটে যেতে হবে। এই পথ এবং তাওয়াফ ও সাঈতে সব মিলিয়ে প্রায় ৭কি:মি: পথ হয়। এমনকি মীনা, আরাফাত ও মুজদালিফায় অনেক দূর পথ পায়ে চলতে হবে। তাই হজ্বের অনেকদিন আগে থেকে প্রতিদিন পৌনে ১ ঘন্টা করে পায়ে হাঁটার অভ্যাস গড়ুন। (এই অভ্যাস যদি সব সময়ের জন্য করে নেয়া যায় তাহলে স্বাস্থের জন্য اِنۡ شَآءَ اللہ عَزَّوَجَلّ খুবই উপকার হবে।) অন্যথায় হঠাৎ করে অনেক পথ পায়ে চলার কারণে হজ্বে আপনি খুবই পরীক্ষার সম্মুখীন হতে পারেন।
[৪] কম খাওয়ার অভ্যাস গড়ুন। সুফল না পেলে তখন বলবেন! বিশেষ করে হজ্বের ১ম থেকে ৫ম দিন পর্যন্ত খুব হালকা পাতলা খাবারের উপরে তুষ্ট থাকুন, যাতে বার বার ইস্তিঞ্জায় যাওয়ার প্রয়োজন না পড়ে। বিশেষ করে মীনা, মুজদালিফা ও আরাফাতে ইস্তিঞ্জাখানায় লম্বা লম্বা লাইন লেগে থাকে।
[৫] ইসলামী বোনেরা কাঁচের চুড়ি পরিধান করে তাওয়াফ করবেন না। ভিড়ের মধ্যে যদি তা ভেঙ্গে যায়, তবে আপনি নিজে এবং অন্যরাও আহত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
[৬] ইসলামী বোনেরা উঁচু হিল বিশিষ্ট সেন্ডেল পরিধান করবেন না। এতে রাস্তায় পায়ে চলার ক্ষেত্রে খুব সমস্যা হবে।
[৭] হেরম শরীফের আবাসিক বিল্ডিংয়ের টয়লেটে ‘ইংলিশ কমোড’হয়ে থাকে। নিজ দেশে তার ব্যবহার শিখে নিন, অন্যথায় কাপড় পবিত্র রাখা অত্যন্ত কষ্টকর হবে।
[৮] কারো দেয়া “প্যাকেট” বা ব্যাগ খুলে চেক করা ব্যতিত কখনো সাথে নিবেন না। যদি চেক করার সময় কোন নিষিদ্ধ বস্তু পাওয়া যায়, তবে বিমান বন্দরে সমস্যায় পড়তে পারেন।
[৯] উড়োজাহাজে আপনার প্রয়োজনীয় ঔষধাদি সহ ডাক্তারী সনদ আপনার গলায় ঝুলানো ব্যাগের মধ্যে রাখুন। যাতে জরুরী অবস্থায় সহজে কাজে আসে।
[১০] জিহ্বা এবং চোখের কুফ্লে মদীনা লাগাবেন। যদি বিনা প্রয়োজনে কথা বলার অভ্যাস থাকে তাহলে গীবত, অপবাদ দেয়া এবং মানুষের মনে কষ্ট দেয়ার মত ইত্যাদি গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা খুবই কষ্টকর হবে। অনুরূপ ভাবে যদি চোখের হিফাযত এবং অধিকাংশ সময় দৃষ্টিকে নত রাখার তরকীব না হয়, তাহলে কুদৃষ্টি দেয়া থেকে বেঁচে থাকা খুবই কঠিন হবে। হেরম শরীফে একটি নেকী এক লক্ষ নেকীর বরাবর, আর একটি গুনাহ এক লক্ষ গুনাহের সমপরিমান। হেরম শরীফ বলতে শুধু মসজিদে হেরম উদ্দেশ্য নয় বরং সম্পূর্ণ হেরমের সীমানা অন্তর্ভুক্ত।
[১১] নামাযরত অবস্থায় মুহরিম ব্যক্তির সীনা অথবা পেটের কিছু অংশ অনাবৃত হয়ে যায়। এতে কোন প্রকারের অসুবিধা নেই। কেননা ইহরাম অবস্থায় এ ধরণের হওয়াটা অভ্যাসের পরিপন্থি নয়, আর এ ব্যাপারে খেয়াল রাখাটা খুবই কঠিন।
[১২] কাফনের কাপড়কে জমজম কূপের পানিতে চুবিয়ে নেয়া খুবই উত্তম। অনুরূপভাবে মক্কা মদীনার বাতাসও একে চুমু দিবে, কিন্তু ঐ কাপড় নিংড়ানোর ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করাটা যুক্তিযুক্ত যে, এই পবিত্র পানির এক ফোটাও যেন গড়িয়ে নালা, নর্দমা ইত্যাদিতে না যায়। কোন চারা গাছ ইত্যাদির গোড়ায় ঢেলে দেয়া উচিত। (জমজমের পানি নিজ দেশেও ছিটাতে পারেন।)
[১৩] অনেক সময় তাওয়াফ ও সাঈ করার সময় হজ্বের কিতাবাদির পৃষ্ঠা ফ্লোরের নিচে পতিত অবস্থায় দৃষ্টিগোচর হয়, সম্ভবপর অবস্থায় তা উঠিয়ে নিন, কিন্তু তাওয়াফ কালে কা’বা শরীফের দিকে যেন পিঠ বা সীনা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। অবশ্য কারো পড়ে যাওয়া টাকা পয়সা অথবা থলে ইত্যাদি উঠাবেন না। (কয়েক বছর পূর্বে এক পাকিস্তানি হাজী তাওয়াফ করার সময় সহানুভূতি দেখাতে দিয়ে অন্য এক হাজীর পড়ে যাওয়া টাকা তুলে নিলেন। টাকার মালিক ভূল বুঝে বসল, আর ঐ সহানুভূতিশীল হাজীকে পুলিশে দিয়ে দিল, আর এই বেচারাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য জেলখানায় ঢুকিয়ে দেয়া হল।)
[১৪] পবিত্র হেজায ভূমিতে খালি পায়ে থাকা ভাল কিন্তু ঘর এবং মসজিদের গোসলখানায় ও রাস্তার ময়লা ইত্যাদি জায়গায় চলার সময় সেন্ডেল পড়ে নিন। এভাবে ময়লা, ধূলাবালি যুক্ত পায়ে মসজিদাঈনে করিমাঈনে এমনকি কোন মসজিদেও প্রবেশ করবেন না। যদি পা যুগলকে পরিষ্কার রাখতে সক্ষম না হন, তবে সেন্ডেল ছাড়া খালি পায়ে থাকবেন না।
[১৫] ব্যবহৃত সেন্ডেল পরিধান করে বেসিনে ওযু করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুন। কারণ নিচে অধিকাংশ সময় পানি ছড়িয়ে পড়ে, তাই যদি সেন্ডেল নাপাক হয়ে থাকে তবে পানির ছিটা লাফিয়ে আপনার পোষাক ইত্যাদিতে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। (এটা স্মরণে রাখবেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত সেন্ডেল বা পানি অথবা কোন বস্তুর ব্যাপারে নিশ্চিত ভাবে নাপাক হওয়ার জ্ঞান অর্জিত হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তা পাক।)
[১৬] মীনা শরীফের ইস্তিঞ্জাখানার নলের পানি সাধারণত খুব জোর গতিতে নির্গত হয়। তাই খুব আসতে আসতে খুলবেন যাতে আপনি ছিটা থেকে বাঁচতে পারেন।
───────────
‘রফিকুল হারামাঈন’ কিতাবের ২৪-২৬ পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। কিতাবটি ডাউনলোড করুন। আরো ইসলামিক কিতাব পেতে এখানে যান।
‘রফিকুল হারামাঈন’ কিতাবের ২৪-২৬ পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত। কিতাবটি ডাউনলোড করুন। আরো ইসলামিক কিতাব পেতে এখানে যান।
0 Comments